শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
ফাঁস হওয়া চীনা নথিতে দাবি

উইঘুর দমনে নির্দেশ দিয়েছিলেন জিনপিং

চীনের রাজনৈতিক দলের এক সদস্য এ নথিটি ফাঁস করেন উইঘুরদের অস্তিত্ব মুছে ফেলার লড়াইয়ে মত্ত চীন :ওয়াশিংটন
নতুনধারা
  ১৮ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং -ফাইল ছবি

যাযাদি ডেস্ক

চীনের জিনজিয়াংয়ের উইঘুর মুসলমান ও সংখ্যালঘু অন্যান্য গোষ্ঠীর লোকদের গণআটক এবং তাদের প্রতি 'কোনো ধরনের ক্ষমা প্রদর্শন না করার' নির্দেশ দিয়েছিলেন দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। 'সন্ত্রাসবাদ, অনুপ্রবেশ ও বিচ্ছিন্নতাবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের চেষ্টার' অংশ হিসেবে তিনি এ নির্দেশ দিয়েছিলেন। মার্কিন সংবাদমাধ্যম 'নিউইয়র্ক টাইমস' শনিবার দাবি করেছে, তাদের হাতে এ সংক্রান্ত নথির চার শতাধিক পৃষ্ঠা রয়েছে, যা চীনের একটি রাজনৈতিক দলের এক সদস্য ফাঁস করেছেন। সংবাদসূত্র : নিউইয়র্ক টাইমস

চীনে প্রায় দেড় কোটি উইঘুর মুসলমানের বাস। জিনজিয়াং প্রদেশের জনসংখ্যার ৪৫ শতাংশই উইঘুর মুসলমান। এই প্রদেশটি তিব্বতের মতো স্বশাসিত একটি অঞ্চল। বিদেশি মিডিয়ার সেখানে প্রবেশের ব্যাপারে কঠোর বিধিনিষেধ রয়েছে। কিন্তু গত বেশ কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন সূত্রে খবর আসে, সেখানে বসবাসরত উইঘুরসহ ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের ওপর ব্যাপক ধরপাকড় চালাচ্ছে বেইজিং।

জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ ও অ্যাক্টিভিস্টরা দীর্ঘদিন থেকেই বলে আসছেন, জিনজিয়াংয়ের বিভিন্ন বন্দিশিবিরে অন্তত ১০ লাখ মুসলমানকে আটক করে রেখেছে চীন। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ মানবাধিকার সংগঠনগুলোও জাতিসংঘের কাছে এ ব্যাপারে উদ্বেগ জানিয়েছে। তবে চীন বরাবরই মুসলমানদের গণআটকের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।

নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফাঁস হওয়া নথিটিতে দেখা গেছে, কীভাবে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ২০১৪ সালে অঞ্চলটি সফরকালে এবং পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন সময় কর্মকর্তাদের উদ্দেশে দেয়া ভাষণে অঞ্চলটির মুসলমানদের ব্যাপারে বেইজিংয়ের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন।

একটি ট্রেন স্টেশনে হামলার পর অঞ্চলটি সফর করেন শি জিনপিং। ওই হামলার জন্য উইঘুরদের দায়ী করা হয়ে থাকে। এরপর সেখানে দেওয়া ভাষণে একনায়কতন্ত্রের উপাদানগুলো ব্যবহার করে 'সন্ত্রাসবাদ, অনুপ্রবেশ ও বিচ্ছিন্নতাবাদের বিরুদ্ধে' লড়াইয়ের নির্দেশ দেন প্রেসিডেন্ট। একইসঙ্গে উইঘুর মুসলমানদের ব্যাপারে কোনোভাবেই অনুকম্পা না দেখানোর নির্দেশ দেন তিনি।

এদিকে, ওয়াশিংটন বলছে, চীনের লড়াই কথিত সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে নয়; বরং জিনজিয়াং থেকে উইঘুর মুসলমানদের অস্তিত্ব মুছে ফেলার লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়েছে বেইজিং।

নথিতে দেখা যায়, অন্যান্য দেশে সন্ত্রাসী হামলা এবং আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সামরিক উপস্থিতি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের ফলে চীনা নেতৃত্বের ভয় বেড়েছে। বন্দিশিবিরে নিয়ে যাওয়া মুসলমান পরিবারের কোনো সন্তান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাড়ি ফিরলে কর্মকর্তারা তাদের জানাতেন, তার পরিবারের সদস্যদের প্রশিক্ষণের জন্য নেওয়া হয়েছে। চীনা কর্মকর্তারা মুসলমান বন্দিশিবিরগুলোকে 'ভোকেশনাল প্রশিক্ষণ কেন্দ্র' হিসেবে আখ্যায়িত করেন।

সম্প্রতি ইসলামকে চীনের সমাজতান্ত্রিক সংস্কৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে বেইজিং। এরই মধ্যে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে দেশটিতে ইসলামের 'চীনা সংস্করণ' বাস্তবায়নের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। এর মাধ্যমে তারা চীনের মুসলমান জনসংখ্যাকে 'চিনিসাইজ' বা চীনা ধারার সমাজতন্ত্রের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে তুলতে চাইছে। এর আওতায় মসজিদগুলোকে গম্বুজের বদলে চীনা স্টাইলের প্যাগোডার আকার দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

দুই কোটি মুসলমানের আবাসস্থল চীন প্রকাশ্যে ধর্মীয় স্বাধীনতার কথা বলে থাকে। দাপ্তরিকভাবে তারা এর নিশ্চয়তাও দেয়। কিন্তু সরকার চাইছে, ধর্মবিশ্বাসীদের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির আদর্শের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে তোলার জন্য। এজন্য তারা ব্যাপক ধরপাকড় ও সংখ্যালঘুদের ওপর বিভিন্ন ধারার নিপীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে।

বর্তমান প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ক্ষমতায় আসার পর থেকেই দেশটিতে বিভিন্ন 'মতবাদে বিশ্বাসী জনগোষ্ঠী'র ওপর চাপ আরও বাড়তে শুরু করে। বিভিন্ন স্থানে মুসলমানদের ধর্ম পালনে বাধা দেওয়ার অভিযোগ তুলেছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো। দেশটির একাংশে ইসলামের চর্চা নিষিদ্ধ। নামাজ-রোজার পাশাপাশি দাড়ি রাখা বা হিজাব পরার মতো কারণেও ধরপাকড়ের হুমকির মুখে পড়তে হচ্ছে অনেককে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<75978 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1