শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
পাঠক মত

চাই শিশুবান্ধব প্রাথমিক বিদ্যালয়

শতাব্দী জুবায়ের শিক্ষাথীর্, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়
  ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০

একটি শিশু তার প্রাথমিক শিক্ষা নেয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তার মৌলিক জ্ঞান বিকাশের স্থানটিও সেই প্রাথমিক বিদ্যালয়টি। আমরা বলি দেশ চলছে উন্নয়নের মহাসড়কে। কিন্তু দেশের শিশুরা প্রথম যেখান থেকে শিক্ষা লাভ করবে সেই জায়গার দিকে দৃষ্টি তেমন দেয়া হচ্ছে না। ঢাকা মহানগরীর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় ৭০ শতাংশ নানা ধরনের সমস্যায় জজির্রত এমন খবরও পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। সমস্যগুলো এরকম- খেলার মাঠ নেই, পুরাতন জরাজীণর্ ভবন, চুনকাম, রঙ সবই নষ্ট হয়ে গেছে, বিদ্যালয়টি রাস্তার পাশে হওয়ায় সড়ক দুঘর্টনার ঝুঁকি ও তীব্র শব্দদূষণ, চেয়ার টেবিল সংকট, পাঠ্যবইয়ের লেখার সঙ্গে মিল নেই শ্রেণিকক্ষের ভেতরের দেয়ালের চিত্র, স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগার নেই, নেই নিরাপদ পানির ব্যবস্থা, শ্রেণিকক্ষ সংকটের, শ্রেণিকক্ষগুলোও স্বাস্থ্যকর। একটি শিশুর মানসিক বিকাশ ঘটায় খেলাধুলা। কিন্তু এই খেলার মাঠটিই দিতে পারছি না আমরা। যেটি তার মৌলিক চাহিদা। শিশুদের তাদের নিজেদের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া, একশিশু অন্য শিশুর সাথে মেশার বা মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যই তো খেলাধুলা। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুদের এই অধিকার থেকে বঞ্চিত করা সমীচিন নয়। তাহলে তাদের মানসিক বিকাশের প্রতিবন্ধকতা খেলারমাঠ না থাকা। রাস্তার পাশে বিদ্যালয় হওয়ায় শিশুদের নিয়ে উদ্বেগের শেষ থাকে না অভিভাবকদের। কারণ ছোট বাচ্চারা বুঝে না অনেক কিছুই। টিফিনের সময় ব্যস্ত সড়কের ওপরই খেলাধুলা করে শিক্ষাথীর্রা। খেলতে গিয়ে একাধিকবার দুঘর্টনার শিকার হয় তারা। রাস্তার পাশে হওয়ায় শব্দদূষণ তো আছেই। যা শিশুর স্মরণ শক্তি কমে যাওয়াসহ নানা সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। তাই শিশুদের স্কুল নিমার্ণ করা উচিত রাস্তা থেকে কিছু দূরে। বিদ্যালয়গুলোতে দেখা যায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। তীব্র শব্দ দূষণের মধ্যেই পাঠ নিতে হয় শিশুদের। এমনিতেই শিশুরা একটু বেশিই চিৎকার চেঁচামেচি করে। তারপর আবার শব্দদূূূূূষণ। এই পরিবেশের মধ্যে একজন শিক্ষক কিভাবে ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠদান করবেন সেটাই দেখার বিষয়। একটা বিষয় লক্ষণীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশে না থাকায় মধ্যবিত্তরা এবং উচ্চবিত্তরা দৌড়ান বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। কিন্তু নি¤œবিত্তরা কোথায় যাবেন? বাধ্য হয়ে তাদের ভতির্ হতে হয় এই সব বিদ্যালয়ে। তাই সব ধরনের পরিবারের সন্তানরা যাতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আকৃষ্ট হয় এই ব্যবস্থা অতিশিগগিরই করা দরকার। তাহলে উচ্চ, মধ্য, এবং নি¤œ সব ধরনের শিশুদের মধ্যে সখ্যতা তৈরি হবে। নানা ধরণের শিশুদের মিশ্রণে নতুন নতুন বিষয় শিখবে শিশুরা। বিত্তবান পরিবারের সন্তানরা ব্যয়বহুল ইংলিশ মিডিয়াম অথবা বেসরকারি বিদ্যালয়ে পাঠ নিচ্ছে। একই পন্থা বেছে নিচ্ছে মধ্যবিত্ত অনেক পরিবারও। রাজধানীর প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোয় শিক্ষা নিচ্ছে মূলত দরিদ্র পরিবারের সন্তানরা। আর এর অন্যতম কারণ বিদ্যালয়গুলো শিশুবান্ধব না হওয়া। অনেক বিদ্যালয়ে নেই শৌচাগার। নেই নিরাপদ খাবার পানির ব্যবস্থাও। কোনো কোনো বিদ্যালয়ে নেই এখনও বিদ্যুত সংযোগ। বিদ্যালয়ের সামনের পরিবেশ অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা। বিদ্যালয়ের নেই নিজস্ব ভবন ও জমি। টিনশেডের আধাপাকা বাড়ির মধ্যে গাদাগাদি করে চলে পাঠদান। বৃষ্টি হলে কক্ষ ভিজে যায়। শ্রেণিকক্ষ সংকটের কারণে গাদাগাদি করে বসতে হয়। এ জন্য শিক্ষাথীর্র সংখ্যা ক্রমেই কমে আসছে। কমে যাওয়াই তো স্বাভাবিক। তাই শিশুদের শিক্ষার পরিবেশ দেয়া এখন সময়ের দাবি। আজকের শিশু আগামির পৃথিবীকে নেতৃত্ব দিবে। এই প্রতিযোগিতার বিশ্বে তাদেরকে সেই ভাবেই তৈরি করতে হবে আমাদের। না হলে পিছিয়ে পরবে আজকের শিশুরা। পিছিয়ে পড়বে বাংলাদেশ। তাই শিশুর প্রাথমিক শিক্ষাটা খুব ভালোভাবে দেয়া উচিত। বিদ্যালয়গুলো করা উচিত শিশুবান্ধব।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<12259 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1