শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
পাঠক মত

নাব্য সংকটে দেশের বেশির ভাগ নদ-নদী

হেলেনা জাহাঙ্গীর ঢাকা
  ৩১ অক্টোবর ২০১৮, ০০:০০

বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। এ দেশের অথর্নীতিও নদীনিভর্র। উপনদী-শাখা নদী-খাল-বিলে ঘেরা এ দেশের জমির উবর্রা শক্তির মূলেও রয়েছে নদী। বাংলাদেশে ছোট-বড় যে তিন শতাধিক নদী আছে সেগুলো আজ বিপন্ন এবং এ বিপন্নতার মূলে রয়েছে নদী দখল করে দখলদারদের ঘর-বাড়ি, দোকান-পাট, উপনগরী গড়ে তোলার ব্যবসা। ভরাটের কারণে পানিপ্রবাহ কমে গেছে ও ক্রমেই কমছে। স্রোতস্বিনী নদীগুলোয় জেগে উঠছে ছোট-বড় অনেক চর। নাব্য হারাচ্ছে নদী। দূষণের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। এভাবে নদীখেকোদের কারণে পানি ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়ছে এবং ইতোমধ্যে দেশের ছোট-বড় অনেক নদীই মৃতপ্রায়। তা ছাড়া প্রতিবছরই দু-একটি করে নদী মরে যাচ্ছে বা শুকিয়ে যাচ্ছে। আর, এর প্রভাব পড়ছে হাওড়-বিলেও। এর ফলে বষার্র সময়ে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে, ভাঙনের মাত্রা বাড়ছে। মানুষ পিতৃ-পুরুষের ভিটে-মাটি, জমি-জমা হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ছে। কেবল তা নয়, নদীদখলের প্রভাবে প্রাণিক‚লেও পড়ছে। বিপযর্স্ত হচ্ছে পরিবেশ।

নদী শুকিয়ে যাওয়ার ফলস্বরূপ নদ-নদী ও মিঠা পানির প্রায় ৬৫ প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। হারিয়ে গেছে ১৮ প্রজাতির প্রাণী। আরও আতঙ্কের বিষয় যে সুন্দরবনেও এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। সুন্দরী, কেওড়া, গোলপাতাসহ মূল্যবান বৃক্ষসম্পদ ধ্বংসের মুখে এবং অনেক পাখি, বন্যপ্রাণী, বনজ উদ্ভিদ ও পোকামাকড়ের বহু প্রজাতিও বিলুপ্তির পথে। এভাবে নদী দখলদারদের দৌরাত্ম্যে দেশের পরিবেশ-প্রতিবেশ বিপন্ন হয়ে পড়েছে ও পড়ছে।

নাব্য সংকটে ভুগছে দেশের বেশির ভাগ নদ-নদী। শুষ্ক মৌসুমে অনেক নদীতেই পযার্প্ত পানি নেই। নদীতে পানি না থাকায় চাষাবাদে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে এমনটিও আশঙ্কা করা হয়েছে বিভিন্ন পত্রপত্রিকা ও সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদনে। বিশেষত আসন্ন সেচ মৌসুমে তিস্তা উপত্যকার কৃষকদের জন্য ভোগান্তির কারণ হয়ে দঁাড়াতে পারে পানিসংকট। শুষ্ক মৌসুমে নদ-নদীতে পানির প্রবাহ অন্য সময়ের চেয়ে কম থাকে এবং এটিই প্রাকৃতিক নিয়ম।

কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোয় দেশের নদ-নদীতে পানির অভাব দেখা দিচ্ছে নানা কারণে। ভাটির দেশ বাংলাদেশের বেশির ভাগ নদ-নদী উজান থেকে আসা অভিন্ন নদ-নদীর পানিপ্রবাহের ওপর নিভর্রশীল। উজানে পানি প্রত্যাহার ভাটিতে শুষ্ক মৌসুমে পানির প্রবাহ হ্রাস পাচ্ছে। পাশাপাশি সুষ্ঠু পানি ব্যবস্থাপনার অভাবে বাংলাদেশের নদ-নদীর ধারণ ক্ষমতা প্রতিনিয়তই কমছে। নদীতে পলি পড়ে পানি ধারণ ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে। পানির অভাবে ব্রহ্মপুত্র নদ হারিয়ে যাচ্ছে। পদ্মা নদীতেও চলছে পানিসংকট। উজান থেকে আসা পানির চাপ হ্রাস পাওয়ায় দেশের উপক‚লভাগের নদ-নদীতে লোনা পানির আগ্রাসন অনুভ‚ত হচ্ছে। উপক‚লীয় এলাকায় চাষাবাদের পরিবেশ ব্যাহত হচ্ছে।

সন্দেহ নেই, বাংলাদেশের নদ-নদীর পানিসংকটের পেছনে উজানে পানি প্রত্যাহার অনেকাংশে দায়ী। তবে এটিকে সংকটের একমাত্র কারণ বলার অবকাশ নেই। দেশের নদ-নদীর সুরক্ষায় নিজেদের ব্যথর্তার দায়ও কম নয়। দেশের নদ-নদীর স্বাভাবিক অবস্থা নিশ্চিত করতে উজানে পানি প্রত্যাহারের প্রবণতা রোধ করতে হবে। এ ব্যাপারে ভারতের সঙ্গে দেনদরবার বাড়াতে হবে। অভিন্ন নদীর পানি ব্যবহারে দুই দেশের গ্রহণযোগ্য কমর্পরিকল্পনা নেয়ার কথা ভাবতে হবে। একই সঙ্গে নদ-নদীর নাব্য রক্ষায় নিতে হবে বহুমুখী উদ্যোগ। নদ-নদীগুলো দেশের সবচেয়ে বড় সম্পদ। কৃষিনিভর্র দেশের চাষাবাদের স্বাথের্ নদ-নদীগুলোকে বঁাচিয়ে রাখতে হবে। পরিবেশ সুরক্ষার ক্ষেত্রেও যার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকাযর্।

বাংলাদেশের বেশকিছু নদী অস্বাভাবিক রকম প্রশস্ত। সে তুলনায় নদীর গভীরতা কম। এ কারণে পদ্মা, মেঘনা, যমুনার মতো বিশাল নদীতেও নাব্যসংকট দেখা দেয়। এসব নদীর কোথাও কোথাও প্রশস্ততা ২০-২২ কিলোমিটার হলেও গভীরতা ৮-৯ ফুট। শুষ্ক মৌসুমে নাব্যসংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করে। নৌপথে পণ্য পরিবহন খরচ কম হওয়া সত্তে¡ও নাব্য না থাকায় নৌপরিবহনের আওতা ক্রমান্বয়ে কমছে। এ সমস্যার সমাধানে বড় নদীগুলোর তীর ভরাট করে নগরায়ণ ও শিল্পায়নের উদ্যোগ নেয়ার পাশাপাশি নদীগুলোর গভীরতা বৃদ্ধির কথা ভাবা হচ্ছে। তবে এ ধরনের পরিকল্পনা দীঘের্ময়াদি ও ব্যয়বহুল। নদীর পাড় টেকসইভাবে বঁাধানো এবং নদীকে দূষণমুক্ত রাখা সম্ভব হলে এ মহাপরিকল্পনা দেশের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী নদীশাসন সম্ভব হলে বন্যা ও নদীভাঙনের হাত থেকে অনেকাংশে যেমন রক্ষা পাওয়া যাবে তেমন নদীর পানি ধারণ ক্ষমতা পাবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<20204 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1