শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শিশু ধষর্ণ উদ্বেগজনকহারে বাড়ছে

আমাদের শিশুদের নিরাপদে রাখতে হবে সবার আগে। কারণ ওরা বুঝতেই পারে না ওদেরই চারপাশের মানুষের ভিড়ে কোনো হায়না লুকিয়ে আছে। তাদের সেই পাথর্ক্য বোঝার বয়সই হয়নি। তাই ওদের চলাফেরা নিরাপদ করার জন্য অভিভাবকে আরও বেশি সচেতন হতে হবে।
অলোক আচাযর্
  ৩১ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

নতুন বছরের শুরু থেকেই ধষর্ণ নামক ব্যাধি মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। কে যে নিরাপদ আর কে যে ধষর্ক তা যেন নিণর্য় করাই কঠিন হয়ে দঁাড়িয়েছে। এর মধ্যে শিশুরা ধষের্ণর শিকার হচ্ছে প্রতিনিয়ত। শিশুরা কেন ধষের্ণর টাগের্ট হচ্ছে। এর কারণ শিশুদের প্রভাবিত করা সহজ। সহজে তাদের মনকে প্রভাবিত করা যায়। আর তাই ধষের্ণর ক্ষেত্রে দুই তিন বা তার থেকেও কম বছরের শিশুদের টাগের্ট করা হচ্ছে। চকোলেট বা অন্যকোনো খাবারের লোভ দেখিয়ে বিকৃত রুচির বহিঃপ্রকাশ ঘটাচ্ছে। বিকৃতমনা মানুষের সংখ্যা এত দ্রæত বেড়ে চলেছে যে মেয়েদের নিরাপদ সাকের্ল বলতে যা বোঝায় তাও যেন ক্রমেই অনিরাপদ হয়ে উঠছে। পরিবারও যেন মেয়েদের কাছে নিরাপদ নয়। তুফান নামটি সারা দেশের মানুষের কাছে ঘৃণিত একটি নাম। যারা ধষর্ণ করে তারা অনেক সময়ই অনেক ক্ষমতাধর হয়। কোনো রাজনৈতিক দলের লেবাস গায়ে জড়িয়ে এরা এসব অপকমর্ আড়াল করার চেষ্টা করে। কিন্তু কথায় বলে চোরের সাতদিন আর সাধুর একদিন। প্রকৃতপক্ষে সন্ত্রাসকে প্রশ্রয় দেয় না কোনো দল। বরং কোনো কোনো ব্যক্তিই দলের নাম ভাঙিয়ে ক্ষমতার সিঁড়িতে উঠতে চেষ্টা করে। তাই যে কোনো দলের উচিত এই ধরনের সন্ত্রাসী কমর্কাÐ যারা করে তাদের দলের বাইরে ছুড়ে ফেলা। কোনো ঘটনা ঘটার পরে নয় ঘটনা ঘটার আগেই তাদের দল থেকে বের করে দিতে হবে। তাতেই দলের মঙ্গল দেশের মঙ্গল। সাধারণ মানুষও স্বস্তিতে থাকে। আর যতদিন এসব নোংরা থাকে ততদিন ভালোর সুবাতাস বইতে পারে না। আমরা সভ্য হচ্ছি, উন্নত হচ্ছি। উন্নত হলে কেবল বাহ্যিক দৃষ্টিকোণ থেকেই উন্নত হলে চলে না। উন্নত হতে হয় মানসিকতায়। আমরা কি দিন দিন মানসিকভাবে পিছিয়ে যাচ্ছি। যারা এসব কমর্কাÐ ঘটছে তারা অনেক সময় নিজের প্রবৃত্তি চরিতাথর্ করতে কোনো রাজনৈতিক দলের লেবাস ব্যবহার করছে। আদতে এসব মানুষ দলের জন্য বোঝা। এদের জন্যই দল সমালোচিত হয়। তাই সমাজবিরোধী কমর্কাÐে জড়িত যে কাউকে কোনো দলেরই কোনোভাবে সুযোগ দেয়া উচিত নয়। সাত মাস থেকে সত্তর বছর। ধষির্তা হয়ে চলেছে কত নারী। কেউ কারও বোন কারও স্ত্রী কারও বা আত্মীয়। হামাগুড়ি দিয়ে যেন সাপের মতো ফণা তুলে প্রতিদিন ধষর্করা ঘুরে বেড়ায়। ওত পেতে থাকে অন্ধকারে। তারপর নৃশংস থেকে নৃশংসতম হয়ে ওঠে। প্রতিদিন কোথাও না কোথাও ধষের্ণর ঘটনা ঘটেই চলেছে। এটা একটা ভাইরাসের মতো ছড়িয়ে চলেছে। শুধু প্রতিষেধকটা জানা নেই। একজন দুইজন করে প্রতিদিন সংখ্যা যেন বেড়েই চলেছে। ধষর্ণ মানে তো শারীরিক মৃত্যু নয়। তবে তা মানসিক মৃত্যু। বেঁচে থেকেও সে মরে থাকে। আবার ধষের্ণর পর মুখ বন্ধ করতে মেরেও ফেলছে। নৃশংস থেকে নৃশংসতম ঘটনা আমরা দেখে চলেছি। সভ্য সমাজে অসভ্য ববের্দর পদচারণায় ক্রমেই ধরণি ভারী হয়ে উঠছে। এর থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার যেন কোনো উপায় নেই। পশুবৃত্তি যেন সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে এমনভাবে চেপে বসেছে যেন সেখান থেকে আলোর পথ দেখিয়ে মনুষ্যত্ব পথ দেখানোর কেউ নেই। সমাজে ধষর্ণকারীদের দাপটই বেড়ে চলেছে।

পাকিস্তানিরাও একসময় এদেশের লাখ লাখ মা বোনের ইজ্জত নিয়েছিল। তোরা নাকি নারীদেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কেটেও নিত। বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খঁুচিয়ে রক্তাক্ত করতো তাদের যৌনাঙ্গ। কিন্তু তারা তো পাকিস্তানি ছিল। ইতিহাসে ওদের ববর্র বলেই সাক্ষী দেয়। কিন্তু আজ যা হচ্ছে তা করছে কারা। এ দেশেও আজ ধষের্ণর পর মাথা ন্যাড়া করে দেয়া হয়। এটা আমাদের কাম্য বাংলাদেশ নয়। এসব বিকৃত মনের মানুষ সোনার বাংলা গড়ার অন্তরায়। নিজ দেশের চেনা মুখগুলোর কাছে প্রতিনিয়ত ধষির্ত হতে হবে স্বাধীন দেশের কেউ তা ভেবেছিল। ভাবেনি মনে হয়। আর ভাবেনি বলেই কবি শামসুর রহমান তার কবিতায় লিখেছেন স্বাধীনতা তুমি গ্রাম্য মেয়ের অবাধে সঁাতার। যেখানে সমাজের আনাচে-কানাচে ধষর্ণকারী ঘুরে বেড়ায় সেখানে অবাধে সঁাতারের প্রশ্নই আসে না। আমাদের মেয়েরা তো বন্দি। অনেক ক্ষেত্রেই আজকাল আবার পরোক্ষভাবে ধষির্তার দিকেই অভিযোগের আঙুল তোলা হয়। আসলে সাপ যাকে কোনোদিন দংশন করেনি সে কি পারে বিষের যন্ত্রণা অনুভব করতে। যে পরিবারের একটা মেয়ে ধষের্ণ শিকার হয় সেই পরিবারই যন্ত্রণা বোঝে। কারণ সমাজটা বড় অদ্ভুত। ধষির্তাকেই নানা কটু কথা শুনতে হয়। আবার ধষর্কদের পক্ষে সাফাই গাওয়ার লোকেরও অভাব হয় না। মেয়েটার কত দোষ চোখে আঙুল দিয়ে বের করে দেয়। এই সাফাই গাওয়ার প্রবণতা ধষর্কদের উৎসাহ দেয়ারই নামান্তর। কিন্তু আমরা তো একটা ধষর্ণকারী মুক্ত সমাজ চাই। ধষর্ণ তো কামের কুপ্রবৃত্তির চ‚ড়ান্ত রূপ। কামের বশবতীর্ হয়ে ওরা যে সমাজটাকেই ধষর্ণ করে চলেছে তার খবর ওরা রাখে না।

সভ্য সমাজে অসভ্য হায়েনার নাচ আর কতকাল দেখতে হবে কে জানে। অবশ্য সভ্যতার দোহাই দিয়ে আজকাল আমরা যা করছি তাতে আর নিজেদের সভ্য বলা যায় কিনা ভেবে দেখতে হবে। পোশাকে-আশাকে রুচিশীল হলেই তাকে সভ্য বলা যায় না। অথবা গাড়ি-ঘোড়া চড়ে সুটেড-বুটেড হয়ে রাস্তায় বেরুলেই সভ্য সমাজের অংশ হওয়া যায় না। সভ্যতা তো থাকে প্রথম অন্তরে তারপর তার বাহ্যিক প্রকাশ ঘটে। এ নিয়ম সব সমাজের সব দেশের। আমরা পোশাকে-আশাকে যতটা সভ্য হয়েছি আচরণে কি ততটাই অসভ্যতা প্রমাণ করছি না। সভ্যতা অসভ্যতা নিয়ে কথা বলে কি লাভ। সভ্য হতে হয় মনে। আমরা কেবল পোশাকেই সভ্যতাকে আনতে পেরেছি।

যারা ধষর্ক তাদেরও কি বোন নেই। তারাও কি তার ভাইয়ের মতো অন্য কাউকে ভয় পায়। সে কি আদৌ জানে তার পরিচিত মুখ কতটা ভয়ংকর। অনেক পরিবারে মেয়ে জন্ম হলে যেন পরিবারে আনন্দিত হওয়ার বদলে কপালে চিন্তার ভঁাজ দেখা যেত এবং আজও যায়। কন্যাশিশু জন্ম হওয়ায় পরিবারের সবার কপালে এই ভঁাজ পড়ত। মেয়েদের ক্ষেত্রে ছিল পদে পদে নিষেধাজ্ঞা। তাদের পৃথিবী ছিল ছোট। আজ তাদের চলায় সে সব বাধা নেই। তবে চলার পথ বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিপদের শংকাও বেড়েছে বহুগুণ। আগে মেয়েদের এটা করা যাবে না ওটা করা যাবে না। এখানে মেয়েদের থাকা ঠিক না বা মেয়েরা এ কাজ করতে পারে না। তাদের নানাভাবে ছোট করা হয়েছে, বানানো হয়েছে পুতুল। আগেই বলেছি পোশাকে হয় না, সভ্যতা হয় মনে। মানসিকতার পরিবতর্ন ছাড়া সভ্যতার উৎকষর্ সাধন অসম্ভব। মেয়েদের ভোগের বস্তুর দৃষ্টিকোণ থেকে চিন্তা করার আগে একবার নিজের পরিবারের দিকে তাকাই। আজ যারা ধষর্ণ করছে তাদের পরিবারের মেয়েদের লজ্জা অনেক বেশি। তারা তো জানতোও না যে তার আশপাশেই এরকম একজন ধষর্ণকারী ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাই সবার আগে নিজের মনকে সভ্যতার মাপকাঠিতে বিচার করতে হবে। অপরাধ অপরাধই। কোনো অপরাধ ছোট নয়। কারণ অপরাধকে ছোট করে দেখলেই তা একসময় মহীরুহ আকার ধারণ করে। কোনো ধষর্ণকারী যেন আইনের আওতা থেকে কোনোভাবেই বের না হতে পারে। ধষর্ণকারীদের কঠোর থেকে কঠোরতম শাস্তি নিশ্চিত করতেই হবে। ধষর্ণকারী কোনো সমাজের কোনো দলের বা কোনো গোষ্ঠীর হোক না কেন সেখান থেকে তাকে টেনে নামাতে হবে। কোনো মতেই তাকে প্রশ্রয় দেয়া যাবে না।

আমাদের শিশুদের নিরাপদে রাখতে হবে সবার আগে। কারণ ওরা বুঝতেই পারে না ওদেরই চারপাশের মানুষের ভিড়ে কোনো হায়না লুকিয়ে আছে। তাদের সেই পাথর্ক্য বোঝার বয়সই হয়নি। তাই ওদের চলাফেরা নিরাপদ করার জন্য অভিভাবকে আরও বেশি সচেতন হতে হবে।

অলোক আচাযর্: কলাম লেখক

ংড়ঢ়হরষ.ৎড়ু@মসধরষ.পড়স

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<34575 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1