প্রিয় শিক্ষার্থী, আজ তোমাদের জন্য বাংলা থেকে সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর দেয়া হলো
মানবধর্ম
উদ্দীপক-১:
আমি কারে কিবা বলি ওরে
দিশে না মেলে।
লোকে বলে লালন ফকির
কোন জাতের ছেলে
ছেদ জড়ায়ে ধরে
এক একেশ্বর সৃষ্টি করে।
আগাম-নিগম চরাচরে
তাইতো জাত ভিন্ন বলে
জগৎজুড়ে জাতের প্রমাণ
হিন্দু, যবন, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান।
তাতে কি হয় জাতের প্রমাণ
শাস্ত্র খুঁজিলে?
উদ্দীপক-২:
সব লোকে কয় লালন কী জাত সংসারে।
লালন কয়
জাতের কী রূপ,
দেখলাম না এ নজরে।
কেউ মালা, কেউ তসবি গলায়,
তাইতে কী জাত ভিন্ন বলায়,
যাওয়া কিংবা আসার বেলায়
জাতের চিহ্ন রয় কার রে...
লালন সে জাতের ফাতা
বিকিয়েছে সাত বাজারে।
প্রশ্ন :
ক. লালন শাহ কী-জাতীয় কবি?
খ. 'যাওয়া কিংবা আসার বেলায়/ জাতের চিহ্ন রয় কার রে'কথাটি ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপক-১-এর সাথে উদ্দীপক-২-এর জাত শব্দটির সম্পর্কগত সাদৃশ্য তুলে ধর।
ঘ. উদ্দীপক দুটিতে লালন ফকির কীভাবে মানবধর্মের জয়গান করেছেন, বিশ্লেষণ কর।
উত্তর : ক. লালন শাহ মরমি জাতীয় কবি।
উত্তর : খ. কথাটি দ্বারা জন্ম ও মৃতু্যর সময় কারও জাত থাকে না প্রসঙ্গে আলোচিত হয়েছে।
মানুষ জন্মেই কোনো জাতপাত গ্রহণ করে না। সে সমাজ বা মানব প্রচলিত ধর্ম দ্বারা বিশেষভাবে পরিচিতি লাভ করে। কিন্তু জন্মের সময় যেমন কোনো জাতের চিহ্ন থাকে না, তেমনি মৃতু্যর সময়েও মানুষের কোনো জাতের পরিচয় থাকে না। তাই কবি যাওয়ার কিংবা আসার বেলায় জাতের চিহ্ন কারও থাকে না বলে মনোভাব ব্যক্ত করেছেন।
উত্তর : গ. উদ্দীপক-১-এর সাথে উদ্দীপক-২-এর জাত শব্দটির সম্পর্কগত সাদৃশ্য হলো মানুষ হিসেবে 'জাত' শব্দটি মানবধর্মের বিপক্ষে অবস্থান।
জাতবিদ্বেষ মোটেও ভালো নয়। লালন ফকিরকে যখন কেউ জিজ্ঞাসা করত, তিনি কোন জাতের বা কোন ধর্মের, তিনি তাদের বলতেন, তিনি মানবধর্মের। সব মানুষই সমান। জাতপাত মানুষের তৈরি। মানুষ তার ব্যক্তিগত ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য জাতপাতের অহংকার করে থাকে।
কিন্তু সমাজজীবনে এই জাতপাতের সম্পর্ক মোটেও মানবিকতাতে তুলে আনতে পারে না বরং সব বিষয়ের মধ্যে এই জাত শব্দটি প্রবেশ করে গোলমাল তৈরি করেছে। যাবতীয় অশান্তির এই কারণ হলো জাতের অহংকার করা। উদ্দীপক ১ ও উদ্দীপক ২-তে আমরা দেখতে পাই, এই জাতপ্রথা ভিত্তিহীন। লালন কোন জাতের ছেলে, সেটা বড় কথা নয়। মানুষ জন্মমৃতু্যকালে কোনো জাতের থাকে না, মানুষ শুধু মিথ্যা ক্ষমতার জন্যই জাতের অহংকার দেখায়।
উত্তর : ঘ. উদ্দীপক দুটিতে লালন ফকির মানবধর্মের জয়গান করেছেন জাতি-বর্ণ-ধর্মনির্বিশেষে মানুষকে ভালোবাসার মধ্য দিয়ে।
লালন ফকির বলেছেন, মানুষ মিছেই ধর্মের দোহাই দিয়ে নিজেদের মধ্যে জাতপাতের বিভেদ তৈরি করে।
মানুষ যেমন জন্মের সময় কোনো জাতের থাকে না আবার মৃতু্যর সময়ও তেমন কোনো জাতের থাকে না।
কিন্তু দুনিয়াদারিতে সবাই একটি বিশেষ ধর্ম মেনে চলে এবং অন্যের প্রতি বিরূপ মনোভাব পোষণ করে নিজেদের মধ্যেই গোলমাল সৃষ্টি করে। ফলে সমাজজীবনে নেমে আসে একপ্রকার অশান্তি। শুধু শুধু ধর্মের নামে গোঁড়ামি করে মানুষ হিসেবে মানুষকে ছোট করে দেখে কোনো ফায়দা লুটে নেয়া যায় না। এই মর্মে লালন ফকির আবারও বলেছেন, প্রচলিত ধর্মের দোহাই বড় নয়, মানুষের মধ্যে সম্প্রীতি স্থাপনের মধ্যেই মানুষের আসল পরিচয়। মানুষে মানুষে কোনো ভেদাভেদ নেই। মানবধর্মই হলো বড় সত্য।
উদ্দীপক অংশ দুটিতে আমরা মানুষের জয়গানকে প্রাধান্য পেতে দেখি। সেখানে প্রচলিত কোনো ধর্মের কথা না বলে লালন ফকির দেখাতে চেষ্টা করেছেন যে মানুষের মূল ধর্মই হলো মানবধর্ম।
একজন ভালো ধর্মের মানুষ মানুষকে কখনো খারাপভাবে দেখে না। সে কখনো মানুষের ভেতরে কোনো জাতপাত দেখে না। লালন ফকির বলেছেন, মানুষের মধ্যে আদর্শগতভাবে মানবিকতার এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে, তাহলে মানবসমাজে শান্তির বাণী ছুঁয়ে যাবে।
পড়ে পাওয়া
উদ্দীপক-১
আরিফ টেক্সিক্যাব চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে। একবার একজন আরোহীকে গন্তব্যে দিয়ে সে বিশ্রাম নিচ্ছিল। হঠাৎ গাড়ির ভেতরে দৃষ্টি পড়তে সে দেখতে পেল, একটি মানিব্যাগ পড়ে আছে সিটের ওপর। ব্যাগে অনেক ডলার। কিন্তু ব্যাগে কোনো ঠিকানা পাওয়া গেল না। সে সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করল। নিরুপায় হয়ে সে পত্রিকার অফিসে গিয়ে সম্পাদককে একটি বিজ্ঞপ্তি ছাপিয়ে দেয়ার অনুরোধ জানায়।
প্রশ্ন : ক) 'পড়ে পাওয়া' কী ধরনের রচনা?
প্রশ্ন : খ) 'ওর মতো কত লোক আসবে'- বিধুর কথাটির অর্থ বুঝিয়ে লেখ।
প্রশ্ন : গ) উদ্দীপকের আরিফকে কোন যুক্তিতে বিধুদের সঙ্গে তুলনা করা যায়? বুঝিয়ে লেখ।
প্রশ্ন : ঘ) 'কলেবরে ক্ষুদ্র হলেও আরিফ চরিত্রটি 'পড়ে পাওয়া'- গল্পের মূল সুরকেই ধারণ করে আছে- মূল্যায়ন কর।
উত্তর : ক. 'পড়ে পাওয়া' একটি কিশোর গল্প।
উত্তর : খ. 'ওর মতো কত লোক আসবে'- বিধুর কথাটির অর্থ, মিথ্যা মালিক সেজে অনেকেই টিনের ক্যাশ বাক্সের লোভে আসতে পারে।
'পড়ে পাওয়া' গল্পের কিশোররা একটি টিনের ক্যাশ বাক্স কুড়িয়ে পেয়ে তা মালিককে ফেরত দেওয়ার পরিকল্পনা করে পোস্টার 'ওর মতো কত লোক আসবে' বিধুর কথাটির অর্থ লাগায়। টিনের সেই ক্যাশ বাক্স পাওয়ার লোভে প্রথম দিনই ভুয়া একজন মিথ্যা মালিক সেজে হাজির হয়। তাকে বেশ প্রমাণের সামনে হাজির হতে হয় এবং সে যথাযথ প্রমাণ দিতে অপারগ হয়। লোভী এই ভুয়া মালিকের সম্পর্ক নির্ধারণ করতে গিয়ে বিধু ওই উক্তিটি করে।