শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
উপজেলা নির্বাচন

বহিষ্কারের বিকল্প ভাবছে বিএনপি

উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গণহারে তৃণমূল নেতাদের বহিষ্কারে দলের ঘুরে দাঁড়ানোর পরিকল্পনা ভেস্তে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে
হাসান মোলস্না
  ১৮ মার্চ ২০১৯, ০০:০০

একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর বিপর্যস্ত তৃণমূল নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়ার কথা ভাবছে বিএনপি। এর অংশ হিসেবে তৃণমূলের চাহিদা অনুযায়ী দলকে ঢেলে সাজাতে নানা পরিকল্পনা করা হচ্ছে। কিন্তু উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলীয় শৃঙ্খলার স্বার্থে গণহারে তৃণমূল নেতাদের বহিষ্কারে ঘুরে দাঁড়ানোর পরিকল্পনা ভেস্তে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। সঙ্গত কারণে বহিষ্কারের বিকল্প ভাবা হচ্ছে।

জানা গেছে, দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ায় গত দুই সপ্তাহে তৃণমূলের অন্তত ১১০ জন নেতাকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। সর্বশেষ গত ১৩ মার্চ তৃণমূলের ১৬ নেতাকে বহিষ্কার করেছে দলটি। এর আগে ৩ মার্চ ৮২ জন, ৫ মার্চ আটজন, ৬ মার্চ তিনজন এবং ৭ মার্চ একজনকে বহিষ্কার করে বিএনপি। প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপ মিলে মাত্র ১৩১টি উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এত বিপুলসংখ্যক তৃণমূল নেতাকে বহিষ্কার করে মূলত তৃণমূল বিএনপির শক্ত ভিত দুর্বল হচ্ছে। বাকি তিন ধাপে ৩৪৯ উপজেলা নির্বাচনে এই ধারা অব্যাহত থাকলে সারাদেশে তৃণমূল বিএনপি আরও বিপর্যয়ের মধ্যে পড়তে পারে।

বিএনপির নীতি নির্ধারণী ফোরামের এক নেতা জানান, সর্বশেষ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে এ দেশে নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন হবে না। সরকার পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজন গণআন্দোলন। সেই আন্দোলনে নেতৃত্বের জন্য দলকে শক্তিশালী করতে হবে। এ জন্য প্রয়োজন পুনর্গঠন। শুধু নামে পুনর্গঠন করলেই হবে না। তৃণমূলের মতামতের ভিত্তিতে কার্যকরভাবেই পুনর্গঠন করতে হবে। এজন্য তৃণমূলের চাহিদা অনুযায়ী দলকে এগিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। তাই তৃণমূল নেতাদের বাদ দিয়ে নয়, তাদের ধরে রেখেই সামনের দিকে এগুতে হবে।

বিএনপি সূত্রমতে, তৃণমূলের চাহিদা অনুযায়ী দল পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এ জন্য আগামী দুই মাসের মধ্যে একটি জাতীয় কাউন্সিল করার কথা ভাবা হলেও তা আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে। এ ব্যাপারে তারেক রহমানের সিদ্ধান্তেই চূড়ান্ত হবে। এছাড়া অঙ্গসংগঠনের সব পর্যায়ের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি ভেঙে নতুন করে গঠনেরও সিদ্ধান্ত আছে। এবার আর বিগত সময়ের মতো পকেট কমিটি নয় তৃণমূলের চাহিদা অনুযায়ী ভোটাভুটির মাধ্যমে দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতৃত্ব নির্বাচন করার পরিকল্পনা রয়েছে। কিন্তু উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তুনমূলের বিএনপি নেতারা নিজের ও আঞ্চলিক আধিপত্যের স্বার্থে দলীয় সিদ্ধান্তকে মানতে পারছে না। নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। আর কেন্দ্র গণহারে বহিষ্কার শুরু করেছে। ফলে তৃণমূল থেকে দলকে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ অবস্থায় দলের নীতি-নির্ধারণী ফোরাম বিকল্প ভাবতে শুরু করেছেন। এছাড়া এ ঘরনার বুদ্ধিজীবীরাও বিকল্প চিন্তারই পরামর্শ দিচ্ছেন।

এ বিষয়ে বিএনপির থিংক ট্যাংক হিসেবে পরিচিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দিন আহমদ বলেন, বহিষ্কারের সিদ্ধান্তটি বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির নেয়া। দলের শৃঙ্খলা ধরে রাখার জন্য এটা প্রয়োজন ছিল। তবে গণহারে বহিষ্কার তৃণমূল বিএনপির স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে পারে। বিষয়টি নিয়ে বিএনপিকে আরও ভাবতে হবে। এ বিষয়ে বিকল্প ভাবতে বিএনপি নেতাদের সঙ্গে কথা বলবেন বলেও জানান এই বুদ্ধিজীবী।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পরবর্তী ধাপের যেসব নির্বাচনের প্রার্থী প্রত্যাহার সম্ভব সেসব নির্বাচনের আগে পদধারী প্রার্থীদের আবারো বুঝিয়ে নির্বাচন থেকে সরে আসতে বলা হতে পারে। স্থানীয় আধিপত্যকে কেন্দ্র করে নির্বাচন থেকে বিরত থাকা সম্ভব না হলে প্রয়োজনে পরিবারের কোনো সদস্যকে দিয়ে নির্বাচন করিয়ে দলীয় বৃহত্তর স্বার্থের প্রতি সম্মান জানাতে বলা হবে। এছাড়া নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে তৃণমূল নেতাদের কাছ থেকেও পরিকল্পনা বা পরামর্শ নেয়া হতে পারে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির এক ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, বহিষ্কারের ফলে তৃণমূল বিএনপিতে কিছুটা হলেও সমস্যা তৈরি হচ্ছে। কিন্তু দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষায় এটা করা ছাড়া কোনো উপায় ছিল না। যে নির্বাচন বিএনপি সম্পূর্ণভাবে বর্জন করেছে, সেই নির্বাচনের যাওয়ার সিদ্ধান্ত যেসব তৃণমূল নেতা নিয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া ছাড়া আর কী করার ছিল! তবে, সাংগঠনিক নিয়ম-কানুন মেনে তারা যদি আবার বিএনপিতে ফিরতে চায়, তাহলে বিষয়টি বিবেচনা করা হবে। আর যাদের এখনও বহিষ্কার করা হয়নি তাদের বিষয়েও বিকল্প কিছু করা যায় কিনা তা ভাবা হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যাপক অনিয়ম, কারচুপি, ভোট ডাকাতির অভিযোগ এনে নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে বিএনপি। পাশাপাশি এই নির্বাচন কমিশন ও সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় দলটি। এই সিদ্ধান্ত অমান্য করে কেউ কোনো নির্বাচনে প্রার্থী হলে দল থেকে বহিষ্কারেরও সিদ্ধান্ত নেয় তারা। সিদ্ধান্ত অমান্য করে উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হচ্ছেন, তাদেরকে পর্যায়ক্রমে বহিষ্কার করা হচ্ছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<41493 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1