শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
উদাসীন কর্তৃপক্ষ

লাইসেন্সের তোয়াক্কা করে না বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিক

স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও প্রশাসনকে ম্যানেজ করে রমরমা বাণিজ্য করছে কয়েক হাজার বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক। বছরের পর বছর লাইসেন্স না নিলেও অজ্ঞাত কারণে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর
জাহিদ হাসান
  ১৮ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০
লাইসেন্সবিহীন লালমাটিয়া ইউরো-বাংলা হার্ট ও জেনারেল হসপিটাল

সরকারি অনুমোদনের তোয়াক্কা না করেই চলছে দেশের বেশিরভাগ বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও প্রশাসনকে ম্যানেজ করে রমরমা বাণিজ্য করছে কয়েক হাজার বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক। বছরের পর বছর লাইসেন্স না নিলেও অজ্ঞাত কারণে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, হাসপাতাল ও ক্লিনিক চালাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে লাইসেন্স নিয়েছে মাত্র ৪৭৭টি। অথচ ঢাকা শহরেই রয়েছে সহস্রাধিক হাসপাতাল ক্লিনিক। ঢাকার বাইরে মহানগর, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কত সংখ্যক বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক আছে তার কোনো পরিসংখ্যান সরকারের কাছে নেই। তবে বিভিন্ন সংস্থা বলছে, এ সংখ্যা ৪ হাজারের বেশি। তাহলে এত সংখ্যক হাসপাতাল ক্লিনিক অনুমতি না নিয়ে প্রশাসনের নাকের ডগায় কিভাবে চলে এমন প্রশ্ন স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টদের। তাদের অভিযোগ, এসব ক্লিনিকের সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা, প্রশাসনের এক শ্রেণি সুবিধাভোগী কর্মকর্তা ও প্রভাবশালীরা জড়িত। কেউ সরাসরি এসব ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত, কেউ এসব হাসপাতাল-ক্লিনিক থেকে মাসোয়ারা হিসেবে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নেন। ফলে নিয়ম বহির্ভূতভাবে চলা সহস্রাধিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান সেবার নামে ব্যাণিজ্য করলেও অজানা কারণে নীরব ভূমিকা পালন করছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

জানা গেছে, গত মঙ্গলবার পর্যন্ত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে লাইসেন্সধারী বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকের সংখ্যা মাত্র ৪৭০টি। এর বাইরে গত ৩০ জুলাই পর্যন্ত সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকের বিভাগভিত্তিক অনুমোদন বা নবায়নের জন্য আবেদন জমা পড়েছে ১ হাজার ৭২৭টি। এরমধ্যে বরিশাল বিভাগে ১০৬টি আবেদন করে অনুমোদন পেয়েছে ৫টি, চট্টগ্রামে ৩৪৪টি আবেদন করে ৬৩টি, ঢাকা বিভাগে ৩২২টি আবেদন করে ২৮৪টি, খুলনায় ৩৪৬টি আবেদন করে ৫৭টি, ময়মনসিংহ বিভাগের ৮৬টি আবেদনের মধ্যে ১৪টি, রাজশাহীতে ২৮৮টি আবেদনের ৩৯টি, রংপুরে ১৮১টি আবেদন করে ২টি এবং সিলেট বিভাগ থেকে ৫৪টি আবেদন করে ১৩টি লাইসেন্স পেয়েছে।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মত, মানুষ বাঁচানো কাজটি যারা করে তাদের অনুমোদন নেই এটা হতে পারে না। মানুষ অসুস্থ হলে তখন কার অনুমতি আছে কার নেই সেগুলো দেখে না। আর এ সুযোগে বেসরকারি হাসপাতালগুলো রমরমা বাণিজ্য করছে। অনুমোদন বা লাইসেন্স ছাড়া কেউ যদি হাসপাতাল বা ক্লিনিক চালায় তাহলে শাস্তির বিধান রয়েছে। অথচ সারাদেশে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে ওঠা অসংখ্য বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের বিরুদ্ধে অভিযান হচ্ছে নামেমাত্র। ভ্রাম্যমাণ আদালত ছাড়া অধিদপ্তরের কোনো তৎপরতা চোখে পড়ে না।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক লাইসেন্স ও নবায়ন শাখার কর্মকর্তারা বলছেন, ১৯৮২ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত প্রায় ৫ হাজার ৩৪০টি বেসরকারি হাসপাতাল লাইসেন্স নিয়েছিল। তারমধ্যে কিছু হাসপাতাল-ক্লিনিক বন্ধ হয়ে গেছে। বাকিরা লাইসেন্স নবায়ন না করেই ক্লিনিক চালিয়ে যাচ্ছে। গত বছর থেকে লাইসেন্স নবায়ন প্রক্রিয়া অনলাইন করা হয়। চলতি বছর অনলাইনে লাইসেন্স অনুমোদন ও নবায়নের জন্য আবেদন করেছে ৪ হাজার ৩৪০টি। শর্তপূরণ করেছে ১ হাজার ৭৩৭টি। এরমধ্যে থেকে সব যাচাই-বাছাই শেষ করে অনুমিত দেয়া হয়েছে মাত্র ৪৭৭টি হাসপাতাল। মূলত লাইসেন্স ফি ও হাসপাতাল পরিচালনায় বিভিন্ন শর্তারোপ করায় অনেকে লাইসেন্স নবায়ন করতে চান না। কারণ ১৯৮২ সালের আইন অনুসারে অনুমোদনের জন্য ৫ হাজার টাকা লাগত, সেটি এখন ৫০ হাজার টাকা করা হয়েছে। টাকার চেয়ে বড় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়ে নানা শর্তারোপ।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের একজন নেতা যায়যায়দিনকে বলেন, রাজধানীতে লাইসেন্স ছাড়া পরিচালিত ১৪টি হাসপাতাল ও ক্লিনিক বন্ধে হাসপাতাল মালিকদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হাইকোর্ট রুল জারি করেছিল। প্রশাসনকে ম্যানেজ করে এসব প্রতিষ্ঠান ঠিকই চলছে।

স্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলনের নেতা ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ডা. রশীদ-ই মাহবুব যায়যায়দিনকে বলেন, মূলত 'চিকিৎসক ও সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান (হাসপাতাল, ক্লিনিক, মেডিকেল কলেজ সুরক্ষা আইন না থাকায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো অনেক অনিয়ম করেও পার পেয়ে যাচ্ছে।

বিষয়টি সম্পর্কে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. আমিনুল হাসান যায়যায়দিনকে বলেন, নবায়ন না করে হাসপাতালের কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তবে অনলাইন পদ্ধতিতে আবেদন প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করতে একটু সময় লাগছে। প্রতি বছর এটা ৩০ জুনের মধ্যে করা হতো, এবার ৩ মাস সময় বাড়নো হয়েছে। আগামী এক মাসে অনুমোদন বা নবায়ন সংখ্যা পর্যবেক্ষণ করে হাসপাতালগুলোর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে আশা করছি, আগামী ৩ মাসের মধ্যে সবাই চলে আসবে।

প্রসঙ্গত, ১৯৮২ সালের 'দ্য মেডিকেল প্র্যাকটিস অ্যান্ড প্রাইভেট ক্লিনিকস অ্যান্ড ল্যাবরেটরিজ (রেগুলেশনস) অর্ডিন্যান্সে বলা আছে, কোনো হাসপাতালে রোগী প্রতি অন্তত ৮০ বর্গফুট ফ্লোরস্পেস থাকতে হবে। পাশাপাশি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অপারেশন থিয়েটারের পাশাপাশি শয্যাসংখ্যার বিপরীতে নির্দিষ্ট সংখ্যক চিকিৎসক ও নার্স থাকতে হবে। সেই সঙ্গে যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম সব ঠিকঠাক থাকা সাপেক্ষে বেসরকারি কোনো হাসপাতাল কার্যক্রম চালাতে পারবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<62791 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1