আজকের যায়যায়দিন

পদ্মা সেতু রেলওয়ে প্রকল্পের কাজ চলছে দ্রæতগতিতে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে ঢাকা থেকে যশোর পযর্ন্ত রেলপথে যেতে সময় লাগবে মাত্র আড়াই ঘণ্টা।

ঢাকা-যশোরের সঙ্গে সরাসরি রেলপথ থাকলেও তা ঘোরাপথ হওয়ায় সময় লাগে ছয় ঘণ্টার মতো। পদ্মা সেতু রেলওয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে অল্পসময়ে রাজধানীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জনগণ। তাতে আথর্-সামাজিক অবস্থার উন্নতি হবে তাদের। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে জিডিপি আনুমানিক ১ শতাংশ বৃদ্ধিতে অবদান রাখবে।

জানা যায়, ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি কাজ শুরু হয় এবং ২০২৪ সালের ৩ জুন পযর্ন্ত প্রকল্পের মেয়াদ। প্রকল্পের মোট ব্যয় ৩৯, ২৪৬.৮০ কোটি টাকা নিধার্রণ করা হয়। জিওবি ১৮,২১০.১১ কোটি টাকা। চীনা সরকারের ২১০৩৬.৬৯ কোটি টাকা প্রকল্পের সাহায্য নেয়া হয় জিটুজি পদ্ধতিতে। রেলপথটি নিমাের্ণ মোট ৩৬৫ দশমিক ১০ হেক্টর জমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন হবে। চায়না রেলওয়ে গ্রæপ লিমিটেডের সঙ্গে ২০১৬ সালের ৮ আগস্ট কমাশির্য়াল চুক্তিপত্র স্বাক্ষরিত হয়। দীঘর্ অপেক্ষা শেষে বাংলাদেশ সরকারের হস্তক্ষেপে ২০১৮ সালের ২৭ এপ্রিল চীনা এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে ২৬৬৭.৯৪ মিলিয়ন ডলারের ঋতচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। নিমার্ণ চুক্তি ২০১৮ সালের ৩ জুলাই কাযর্কর হয়।

প্রধান সমন্বয়ক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মো. আব্দুল মুকিম সরকার বলেন, প্রকল্প অনুযায়ী, রেলপথটি ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ হয়ে পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে চলে গেছে যশোর পযর্ন্ত। যা ১৭২ কিলোমিটার দীঘর্। এর মধ্যে ২০টি স্টেশন আছে। যার মধ্যে নতুনভাবে নিমার্ণ করা হবে ১৪টি স্টেশন আর পুরনো স্টেশন সংস্কার করা হবে ছয়টি। ব্রডগেজ সিঙ্গেল লাইনের এ রেলপথে ১২০ কিলোমিটার গতিতে চলবে ট্রেন। ঢাকা-ভাঙ্গা পযর্ন্ত ভূমি অধিগ্রহণ শেষ। ভাঙ্গা-যশোর পযর্ন্ত শুরু হবে দ্বিতীয় পবর্। ৬-৮ মাসের মধ্যে এর কাজও শেষ হবে।

কিরগিজস্তানে পাচার বাংলাদেশিদের উদ্ধারে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ

প্রকৌশলী সূত্র জানায়, ঢাকা-যশোর পযর্ন্ত নতুন ১৪টি স্টেশন হলো-কেরানীগঞ্জ, নিমতলা, শ্রীনগর, মাওয়া, জাজিরা, শিবচর, ভাঙ্গা জংশন, নগরকন্দা, মুকসুদপুর, মহেষপুর, লোহাগড়া, নড়াইল, জামাদিয়া ও পদ্মাবিলা। এছাড়া সংস্কার করা হবে ঢাকা, গেÐারিয়া, ভাঙ্গা, কাশিয়ানী, রূপদিয়া ও সিঙ্গিয়া রেলস্টেশন। রেলস্টেশনগুলোতে থাকবে আধুনিক সিগনালিং ব্যবস্থা। সবোর্চ্চ ২৫ টন এক্সেল লোড বহন করতে পারবে। ৬৬টি বড় সেতু ও ২৪৪টি ছোট সেতু নিমার্ণ করা হবে। রেলপথ ও সড়কের বিভাজনে থাকবে আন্ডারপাস, অপটিক্যাল ফাইবারের টেলিযোগাযোগ, ভায়াডাক্ট, রুফ ওয়ে, রেলক্রসিং, রেল ওভার ব্রিজ, প্রকল্প কাযার্লয় ও ক্ষতিগ্রস্তদের পুনবার্সন কেন্দ্র। রেললাইনে যুক্ত হয়েছে এলাসট্রেস ট্রাক, যা আগে কখনও হয়নি। ট্রপোগ্রাফিক সাভের্, হাইড্রোগ্রাফিক সাভের্, সয়েল ইনভেস্টিগেশনের কাজগুলো শেষের দিকে। সয়েল টেস্ট শেষ হওয়ার পর মূল ডিজাইনের কাজ শুরু হবে। নীমতলা ও শ্রীনগরে ভূমি অধিগ্রহণ প্রায় শেষ।

প্রধান সমন্বয়ক মেজর জেনারেল আবু সাঈদ মো. মাসুদ বলেন, সিএসসি (কনস্ট্রাকশন সুপারভিশন কনসালট্যান্ট), বাংলাদেশ রেলওয়েকে সাহায্য করেছে উঙজচ (ডেভেলপমেন্ট অগার্নাইজেশন অফ দ্য রুরাল পোর) নামে একটি এনজিও। সিএসসি এখানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীসহ দেশি ইঞ্জিনিয়ার ও বিদেশি পরামশর্ক, বুয়েট দ্বারা গঠিত। প্রকল্পটির জন্য ১৭০০ একরের মতো জমি অধিগ্রহণ করতে হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তরা যাতে যথাযথ ক্ষতিপূরণ পায় সেজন্য কাজ করছে উঙজচ। আবাদি জমির যাতে কোনো ক্ষতি না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা হয়েছে।

প্রকৌশল সূত্রে জানা যায়, ২৩ কিলোমিটার এলিভেটেড ভায়াডাক্টে বøাস্টবিহীন রেললাইন নিমার্ণ করা হবে। এলিভেটেড ভায়াডাক্টের ওপর ২টি প্লাটফরম, ১টি মেইন লাইন ও ২টি লুপলাইনসহ রেলওয়ে স্টেশন নিমার্ণ ও তাতে লিফট স্থাপন করা হবে। প্রায় ১১ মিটার উঁচু রেললাইনের নিচ দিয়ে সড়কের জন্য আন্ডারপাস নিমার্ণ করা হবে যাতে উভয় পথে নিরবচ্ছিন্ন ও নিরাপদে ট্রেন, গাড়ি চলাচল করতে পারে। সফট সয়েল ট্রিটমেন্টের জন্য সিমেন্ট মিক্স পাইল ব্যবহার করা হচ্ছে। সেতুর অ্যাপ্রোচ ট্রানজিশনাল কাভর্ নিমার্ণ করা হচ্ছে। ৩০টি লেভেল ক্রসিং গেট নিমার্ণ করা হচ্ছে, কম্পিউটার বেজড সিগন্যালিং ব্যবস্থা রাখা হবে ২০টি স্টেশনে, কেন্দ্রীয়ভাবে ট্রেন নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা থাকবে ঢাকা স্টেশনে। ব্রডগেজের জন্য যাত্রীবাহী গাড়ি সংগ্রহ করা হবে ১০০টি।

এর আগে ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাওয়ায় এসে পদ্মা সেতুর রেলসংযোগ প্রকল্পের নিমার্ণ কাজের উদ্বোধন করেন।