শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঘাটতি মেটাতে ৪৭ হাজার কোটি টাকার ব্যাংক ঋণ

আকারে অতীতের চেয়ে সবচেয়ে বড় বাজেটের ঘাটতি ধরা হচ্ছে এক লাখ ৪৫ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা। বিশাল ঘাটতি মেটাতে এবারও তারল্য সংকটে চলা ব্যাংকিং সেক্টর থেকে উচ্চ সুদে ৪৭ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা ঋণ নিচ্ছে
যাযাদি রিপোর্ট
  ১২ জুন ২০১৯, ০০:০০

টানা তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ সরকারের প্রথম বাজেট ঘোষণা করা হবে আগামী ১৩ জুন বৃহস্পতিবার। সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীদের আকাঙ্ক্ষা পূরণের লক্ষ্যে ঐ দিন পাঁচ লাখ ২৩ হাজার কোটি টাকার বাজেট পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

আকারে অতীতের চেয়ে সবচেয়ে বড় বাজেটের ঘাটতি ধরা হচ্ছে এক লাখ ৪৫ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা। বিশাল ঘাটতি মেটাতে এবারও তারল্য সংকটে চলা ব্যাংকিং সেক্টর থেকে উচ্চ সুদে ৪৭ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা ঋণ নিচ্ছে। গত বছর বাজেটে ৪৫ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি ছিল। কিন্তু সংশোধিত বাজেটে সেখান থেকে ১৫ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে ৩০ হাজার কোটি টাকা করা হয়।

এক্ষেত্রে সরকার ঘাটতির ৭১ হাজার ৮০৩ কোটি টাকা ঋণ নিচ্ছে বৈদেশিক সহায়তা থেকে। তবে তা বাস্তবে সম্ভব হবে না। কারণ এখনো ১০ বিলিয়ন ডলার সমান বৈদেশি ঋণ আটকে আছে।

নাম না প্রকাশের শর্তে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, '২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট ঘাটতি ১৬ দশমিক চার শতাংশের বেশি হবে। তবে জিডিপির তুলনায় পাঁচ শতাংশের মধ্যে থাকতে পারে। আর তাতে সরকার বাজেট ঘাটতি পূরণে জাতীয় সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণের উপর নির্ভরশীলতা কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফলে সঞ্চয়পত্রে অতিরিক্ত সুদ দিতে হবে সরকারকে।'

পাশাপাশি নতুন জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর, সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে নতুন নিয়মনীতি পরিবর্তন আরোপ করেছে। সেগুলো হল- সঞ্চয়পত্র কিনতে হলে জাতীয় পরিচয়পত্র লাগবে। এক লাখ টাকা পর্যন্ত সঞ্চয়পত্র কিনতে হলে ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বরটি সার্টিফিকেট (টিআইএন) লাগবে, যা গত মে থেকে সংরক্ষণ সার্টিফিকেট বিক্রি শুরু করা হয়েছে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সরকার অভ্যন্তরীণ ব্যাংকিং সেক্টর থেকে বেশি সুদে ঋণ না নিয়ে কম সুদে বৈদেশিক ঋণ সুবিধা গ্রহণ করতে পারত। তাতে উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ বেশি রাখা সম্ভব হতো।

তারা বলছেন, সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়ে তা বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না। রবং বেসরকারি খাতে ক্রেডিট সুবিধায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ার শঙ্কা রয়েছে। ফলে গত বছরের মতই আবারও সঞ্চয়পত্র থেকেই বেশি ঋণ নিতে হবে।

অর্থনীতিবিদদের মতে, বড় গ্রহীতারাই সরকার থেকেও ঋণ পাচ্ছে। ফলে ক্রেডিট সুদের হারে বেসরকারি খাতের ছোট ঋণ গ্রহীতারা বাদ পড়ছে। সাম্প্রতিক গত ১২ বছরের সংশোধিত ঋণ পুনঃনির্ধারণ নীতির পাশাপাশি সরকার ব্যাংক খাত থেকে আরও ঋণ নিলে ব্যাংকিং সেক্টরে চরম তারল্য সংকট তৈরি হবে। তাতে নতুন করে ব্যাংখগুলোর ঋণ প্রদানের সক্ষমতা থাকবে না।

নাম না প্রকাশের শর্তে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা বলেন, 'বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন ঋণ পুনঃতফসিলি করণের ফলে ব্যাংকি খাত সুবিধা পাবে সরকার থেকে। কারণ সংশোধিত বাজেটের তুলনায় সরকার ৪০ শতাংশ ঋণ কম নেবে জাতীয় সঞ্চয়পত্র থেকে। অর্থ বিভাগ এখন সঞ্চয়পত্র বিক্রির আইন ঠিকঠাক করছে। সরকার আগামী বাজেটে সঞ্চয় পত্র থেকে ২৬ হাজার ৮০০ কোটি টাকা ঋণ নেবে।'

জাতীয় সঞ্চয়পত্র অধিদপ্তরের মতে, চলতি অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৬ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা। আর সংশোধিত বাজেটে এটি দাঁড়িয়েছে ৪৫ হাজার কোটি টাকা। তবে জুলাই থেকে মার্চ মাসে সার্টিফিকেট বিক্রি হয়েছে ৬৮ হাজার ৯৭২ কোটি ৭২ লাখ টাকা। সঞ্চয়পত্রের সুদ হার সর্বোচ্চ ১১ দশমকি ৫২ শতাংশ হারে বাড়ায় বছরের শেষ দিকে ব্যাপকহারে সঞ্চয়পত্র বিক্রি বেড়েছে।

অর্থ বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, এক লাখ ৪৫ হাজার ৩৮০ কোটি টাকার ঘাটতি মেটাতে দুই থেকে আট শতাংশ সুদে ৭১ হাজার ৮০৩ কোটি টাকার বৈদেশিক ঋণ সহায়তা নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সরকার বন্ডের মাধ্যমে ব্যাংক থেকে দুই থেকে ১১ শতাংশ সুদে ঋণ নিচ্ছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (বিআইডিএস) এর সাবেক মহাপরিচালক মুস্তাফা কে মুজেরী বলেন, 'সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের চেয়ে সরকার চেয়ে ছিল সাধারণ মানুষ ব্যাংকে বেশি আমানত রাখতে। কিন্তু সঞ্চয়পত্রে সুদের হার না কমায় এটা হয়নি।'

তিনি বলেন, 'রাজস্ব আহরণে ঘাটতির কারণে সরকার ব্যাংকিং সেক্টর ও জাতীয় সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নিচ্ছে। দেশের উৎপাদিত খাতে ব্যাংক ঋণের পরিমাণ সরকারকে ব্যবহার করতে হবেন।'

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, 'সরকার বিদেশি উৎস থেকে আরও ঋণ সংগ্রহের জন্য নীতিমালা গ্রহণ করেছে। তা সত্ত্বেও বাণিজ্যিক ঋণের ক্ষেত্রে আলাদা সুদ হার গ্রহণ করা হচ্ছে।'

তিনি বলেন, 'ব্যাংকিং সেক্টরের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা কম থাকার পাশাপাশি সঞ্চয়পত্রে সুদ হার বেশি থাকায় মানুষ ব্যাংকে ডিপোজিট রাখছে না। ব্যাংকের পরিবর্তে সঞ্চয়পত্রে যাচ্ছে বেশির ভাগ লোক।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<53128 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1