বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

ঝিনাইদহে করোনার ক্ষতি পোষাতে নতুন উদ্যোমে ফুল চাষ করছে চাষীরা

তারেক মাহমুদ, ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
  ২৪ নভেম্বর ২০২০, ১৯:৪৩
ঝিনাইদহে করোনার ক্ষতি পোষাতে নতুন উদ্যোমে ফুল চাষ করছে চাষীরা

ক্ষেতে ফুলের চারা রোপনে ব্যস্ত সময় পার করছেন ঝিনাইদহ সদরের গান্না-পাইকপাড়া গ্রামের দুই ভাই সাজু মন্ডল ও সাহাবুল ইসলাম। করোনার কারনে ফুল বিক্রিতে ধ্বস নামায় তাদের লোকসান হয়েছিল। ফলে সেই জমিতে শষার চাষ করেছিলেন তারা। নতুন করে ফুলের চাষ করে সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে চায়।

কৃষি বিভাগের তথ্যমতে সর্বশেষ জেলায় করোনা সংক্রমণের পূর্বে ফুলের আবাদ ছিল ১৭৬ হেক্টর জমিতে। তবে বর্তমানে লাভজনক এই আবাদ কমে দাড়িয়েছে মাত্র ৪০ হেক্টর জমিতে। তবে এ চাষের সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পাবে বলে আশা জেলা কৃষি বিভাগের।

ফালচাষি সাজু মন্ডল জানান, সামনে স্বাধীনতা দিবস, বসন্ত বরণ, বিশ্ব ভালবাসা দিবস ও একুশে ফেব্রুয়ারী। এসব দিবসে ফুলের ভালো দাম হয়। তাই করোনার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এক বিঘা জমিতে গাদা ফুলের চারা রোপন করছি। আশা করা যায় আগের ক্ষতিটা পুষিয়ে নিতে পারবো। এক বিঘা জমিতে রোপনের জন্য আট হাজার চারা কিনেছি তিন হাজার দুই শত টাকা দিয়ে।

এমন চিত্র জেলার সদর, কালীগঞ্জ, মহেশপুরসহ ফুল উৎপাদনকারী এলাকার চাষীদের। অব্যাহত লোকসানে দিশেহারা চাষীদের অনেকেই ফুলের পরিবর্তে ধান কিংবা সবজির চাষ করেছিলেন। তবে আশাহত এসব কৃষকরা সুখের দিন আসবে এমন আশায় রঙিন স্বপ্ন তাদের চোখে মুখে। অনেক ফুল চাষীই এখন এমন স্বপ্ন বুনছেন। সেই স্বপ্নে কেউ নতুন করে চারা রোপন করছেন কেউবা রোপনকৃত চারা পরিচর্যা করছেন। এখন থেকে পরিচর্যা করা গেলে দেড় থেকে দুই মাস পর ভালো মানের ফুল পাওয়া যাবে।

ফুল চাষী শফিকুল ইসলাম জানান, করোনার আগে প্রায় দুই বিঘা জমিতে গরম জাতের গাদা ফুল ছিল। লকডাউনে পরিবহন ব্যবস্থা বন্ধ থাকায় ক্ষেতের ফুল তুলে একবারেই বাজারে বিক্রি করতে পারছিলাম না। যার কারনে সব গাছ কেটে ফেলি। এতে আমার লোকসান হয় দেড় লক্ষ টাকার মত।

ফুল গাছ কেটে দিয়ে ধান লাগিয়েছিলাম আর অল্প একটু জমিতে সবজি চাষ করেছিলাম। তবে যে জমিতে ধান লাগিয়েছিলাম সেখানে এখন পুনরায় ফুল আবাদের জন্য জমি প্রস্তুত করছি। জেলার অন্য ফুলচাষীরা জানান, ফুল চাষই আমাদের সম্বল। তাই ক্ষতিগ্রস্থ হলেও আশাহত হয়নি।

জেলার সব থেকে বড় গান্না বাজার ফুল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি দাউদ হোসেন জানান, করোনার কারনে ব্যবসায়ীদের মার্টেকে লাখ লাখ টাকা অনাদায়ী হয়ে গেছে। ঢাকা, কুমিল্লাসহ বড় বড় শহরের ব্যাপারীদের কাছে আমাদের টাকা আটকে আছে। তারা টাকা দিচ্ছে না। সামনের দিনগুলোতে যদি করোনার সংক্রমণ কমে যায় কিংবা সরকার যদি কমিউনিটি সেন্টারগুলো খুলে দেওয়ার পাশাপাশি স্বাস্থ বিধি মেনে একুশে ফেব্রুয়ারী, স্বাধীনতা দিবসসহ নানা উৎসব উৎযাপনের অনুমতি দেয় তাহলে ফুলের চাহিদা বাড়বে। এতে আমরা পাওনা প্রাপ্তির পাশাপাশি আবার ব্যবসায় স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যেতে পারবো।

ঝিনাইদহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) মোশাররফ হোসেন জানান, সামনের দিনগুলোতে চাষীরা যাতে ভালোমানের ফুল পেতে পারেন এ জন্য তাদেরকে উন্নত মানের চারা রোপন, রোগ-বালাই দমন থেকে শুরু করে নানা কারিগরি পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। সাথে কম জমিতে কিভাবে বেশী ফুল উৎপাদন করা যায় সে বিষয়ে দিক-নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে