শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শিক্ষা কার্যক্রমে গাইডবুক মেনে নেওয়া যায় না মাহমুদুল হক আনসারী

আগামী প্রজন্মের শিক্ষা কার্যক্রমকে গতিশীল করতে অবশ্যই এসব অনৈতিক গাইডবুক ও কোচিং কার্যক্রম কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
নতুনধারা
  ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

সাম্প্রতিক সময়ে শিক্ষা কার্যক্রমে গাইডবুকের প্রচলন আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। সবার জন্য শিক্ষা কার্যক্রম বিনামূল্যে রাষ্ট্রের পক্ষে নিরবচ্ছিন্নভাবে চলছে। শিক্ষা জাতির জন্য অপরিহার্য বিষয়। শিক্ষা বাধ্যতামূলকভাবে চালু আছে। শহর নগর সব ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয়ভাবে শিক্ষা খাতকে অধিক গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। বছরের প্রথম দিন সন্তানদের হাতে বই তুলে দেয়া হচ্ছে। শিক্ষার্থী শিক্ষক সবার জন্য রাষ্ট্রীয় সর্বাত্মক সুবিধা দেয়া হচ্ছে। শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষা সচিব শিক্ষা কার্যক্রম তদারকি করার জন্য রাষ্ট্রীয় অনেকগুলো সংস্থা কাজ করছে। প্রাথমিকের বই থেকে মাস্টার্সসহ সবগুলো শিক্ষা কার্যক্রম নিরুপম নির্ভুলভাবে পরিচালনার জন্য অনেকগুলো সংস্থা তৎপর রয়েছে। যেসব শিক্ষক শিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করছেন তাদের সুযোগ-সুবিধা বেতনভাতা, এমপিওভুক্তি সবকিছু সরকার ও মন্ত্রণালয় গুরুত্বের সঙ্গে ন্যায্য অধিকার দিয়ে যাচ্ছে। তবুও স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা শিক্ষায় যেভাবে লেখাপড়ার মান থাকার ও পাওয়ার কথা ছিল তা কিন্তু বাস্তবে সমাজ দেখছে না। শিক্ষা অমূল্য সম্পদ। জাতির উন্নয়ন অগ্রগতির সোপান। শিক্ষা ব্যতিরেকে জাতিকে অগ্রগতিতে নেয়া সম্ভব নয়। কিন্তু এ শিক্ষায় এক শ্রেণির শিক্ষক ও কতিপয় মহল শিক্ষাকে জাতীয়ভাবে ধ্বংস করতে ওঠেপড়ে লেগেছে। বহু আলোচনা সমালোচনার পর সৃজনশীল শিক্ষা ব্যবস্থা চালু হয়। এখানে গাইডবুকের প্রয়োজন পড়ে না। একজন শিক্ষার্থী তার সিলেবাস বই রপ্ত করে সেখান থেকে সে তার মেধা যাচাই-বাছাই করার কথা। শিক্ষক ছাত্রকে সেভাবে গড়ে তুলবে। সৃজনশীল শিক্ষা দিয়ে ছাত্রকে লেখাপড়ায় সহযোগিতা করার দায়িত্ব শিক্ষক সমাজের। সরকার বিনামূল্যে প্রাথমিক থেকে এসএসসি পর্যন্ত বই শিক্ষার্থীর হাতে তুলে দিচ্ছে। কিন্তু সে ফল শিক্ষার্থী ও অভিভাবক পাচ্ছে বলে মনে হয় না। প্রাথমিক স্তর থেকে এসএসসি পর্যন্ত সবগুলো ক্লাসের জন্য ছাত্রকে গাইডবুকের শরণাপন্ন হতে হচ্ছে। স্কুল থেকে গাইডবুকের তালিকা প্রদান করা হয়। এক শ্রেণির গাইডবুক প্রকাশক আগে থেকে স্কুল ও কতিপয় শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ করে গাইডবুকের তালিকা তৈরি করে রাখে। অবশ্যই ছাত্রদের গাইডবুক বাজার থেকে ক্রয় করতে হয়। শিক্ষক নিজেও গাইডবুকের সাহায্যে পাঠদান করছে। শিক্ষার্থীদের গাইডবুকের প্রতি আসক্ত করা হচ্ছে। মূল বই ফেলে রেখে গাইডবুকের ওপর পড়ালেখা করতে দেখা যাচ্ছে ছাত্রদের। বিভিন্ন মহল থেকে প্রকাশিত এসব গাইডবুক কিভাবে বাজারে আসছে সেখানেই নানা প্রশ্ন। কোটি কোটি টাকার এসব বই দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছে যাচ্ছে। ১০ টাকার বই একশো টাকায় বিক্রি করছে। জমজমাট গাইডবুকের ব্যবসা। লাইব্রেরিগুলোতে এখন পুরো দমে গাইডবুকের ব্যবসা চলছে। স্থানীয় প্রশাসন ও কেন্দ্রীয় প্রশাসনকে কিভাবে ফাঁকি দিয়ে এসব গাইডবুক বাজার দখল করছে সেখানে অনেক প্রশ্ন রয়ে যায়। কয়েক দিন আগে শিক্ষামন্ত্রী গাইডবুকের ব্যাপারে কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, গাইডবুকনির্ভর শিক্ষা চলতে পারে না। এসব অপতৎপরতা বন্ধ করতে হবে। স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে গাইডবুকবিরোধী অভিযান চালানোর কথাও তিনি বলেছেন। প্রতিবছর এ সময়ে গাইডবুক নিয়ে লেখালেখি কথা হয়ে থাকে। পত্রিকায় লেখালেখি হলে প্রশাসন কিছুটা ঘুরেফিরে ওঠে। আবার সারা বছর এসব অনৈতিক কাজকর্ম চলে। কথা হচ্ছে গাইডবুকের সঙ্গে জড়িত শিক্ষক প্রকাশক ও ছাত্র। আসলে ছাত্রদের ব্যবহার করে গাইডবুকের হাজার হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য। তাহলে সরকারের বিনামূল্যে বই বিতরণের দরকার কি ছিল। এক দিকে সরকার বিনামূল্যে বই শিক্ষার্থীর হাতে তুলে দিচ্ছে। অন্যদিকে চড়ামূল্যে গাইডবুক বাজার থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা ছাত্রদের থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে। পক্ষান্তরে এসব সাফার করছে অভিভাবক মহল। সৃজনশীল শিক্ষা কার্যক্রম চললে সেখানে গাইডবুকের প্রয়োজন হয় না। কিন্তু বাস্তবে স্কুলগুলোতে কি শিক্ষা দেয়া হয়, সে জায়গায় অভিভাবকদের প্রশ্ন। এত সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার পরও শিক্ষকরা গাইডবুকনির্ভর শিক্ষায় জড়িত। এটা মেনে নেয়ার কথা নয়। শিক্ষকদের অবশ্যই সৃজনশীল পদ্ধতিতে শিক্ষা কার্যক্রম চালাতে হবে। অভিভাবক, স্কুল কমিটিকে তা কঠোরভাবে তদারকি করতে হবে। জানা যায়, স্কুল ও মাদ্রাসার অনেক শিক্ষক ক্লাসে গাইডবুক হাতে নিয়ে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দেয়। এটা আরো মারাত্মক অপরাধ। যাদের সিলেবাস পড়ে শিক্ষা দেয়ার মতো সৃজনশীল জ্ঞান নেই, তাদের এ পেশায় আসা উচিত নয়। তাদের নিয়োগ দেয়াও অন্যায়। সুতরাং শিক্ষা যেহেতু উন্নয়ন অগ্রগতির অন্যতম সোপান, সেহেতু শিক্ষাকে অবশ্যই এ জাতীয় অনৈতিক দুর্নীতির রাহুগ্রাস থেকে মুক্ত করতে হবে। এ জন্য স্কুল ও মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটি স্থানীয় উপজেলা ও জেলা প্রশাসনের দায়িত্ব রয়েছে। গাইডবুক ছাপা, বাজারজাত, বেচাবিক্রি সবকিছু কঠোরভাবে নজরদারি করতে হবে। স্কুল ও মাদ্রাসা থেকে গাইডবুকভিত্তিক শিক্ষা বন্ধ করতে হবে। গাইডবুকনির্ভর শিক্ষা কার্যক্রম নিরুৎসাহিত করতে শিক্ষকদের ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রাম বাস্তবায়ন করতে হবে। তাদের সৃজনশীল শিক্ষা বিস্তারে প্রশিক্ষণের আওতায় আনতে হবে। শিক্ষাবান্ধব নৈতিক গুণাবলিসম্পন্ন শিক্ষক ও অভিভাবকদের এসব প্রতিষ্ঠানের কমিটিতে রাখতে হবে। শিক্ষানুরাগী শিক্ষিত জনগণকে শিক্ষা কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করতে হবে। শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতার মাধ্যমে নৈতিকতার শিক্ষা দিতে হবে। গাইডবুক, কোচিংনির্ভর শিক্ষা কার্যক্রম কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এসব কাজে জড়িতদের ছাড় দেয়ার মতো নয়। তারা ধীরে ধীরে জাতিকে অন্ধকারের দিকে ধাবিত করছে।

আগামী প্রজন্মের শিক্ষা কার্যক্রমকে গতিশীল করতে অবশ্যই এসব অনৈতিক গাইডবুক ও কোচিং কার্যক্রম কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

মাহমুদুল হক আনসারী: সংগঠক, গবেষক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<88040 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1