বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ

সচেতন হওয়া জরুরি
নতুনধারা
  ১৮ এপ্রিল ২০২১, ০০:০০
গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ

আবারও গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এক প্রতিবেদনে প্রকাশ, বগুড়ার শেরপুর উপজেলায় গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে চারজন দগ্ধ হয়েছেন। শুক্রবার বেলা ১০টায় উপজেলার মহিপুর কলোনি গ্রামের মো. বুলবুল ইসলামের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। দগ্ধ ব্যক্তিরা হলেন- হেলেনা বেগম (৪৮), আমেনা খাতুন (৪৬), জোসনা খাতুন (৩০) ও মো. নুরুজ্জামান (৩২)। তাদের উদ্ধার করে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। রান্নাঘরের গ্যাস সিলিন্ডারে লিকেজ ছিল। সকালে গ্যাসের চুলা জ্বালানোর সময় ওই লিকেজ থেকে সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে একই পরিবারের চার সদস্য দগ্ধ হন। করোনাকালে এই ধরনের ঘটনা অত্যন্ত মর্মান্তিক। করোনায় প্রতিদিন মানুষের প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে। দিনে মৃতু্য ১০০ ছাড়িয়ে গেছে, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এর মধ্যে যদি গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে এবং ফলে যদি কেউ মারা যান, তবে তা সত্যিই বেদনা দায়ক। বাংলাদেশে এখন আর স্বাভাবিক মৃতু্যর নিশ্চয়তা নেই। যাদের এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার কথা তারা রয়েছে চরম উদাসীন। এক মৃতু্যর রেশ না কাটতেই আরেক মৃতু্য এসে হাজির হয়। আমরা শোকগ্রস্ত ও হতাশ হই। এটাই বাংলাদেশের সমাজে বাস্তবতা। বাংলাদেশের মানুষের নিয়তি। অন্যান্য দুর্ঘটনার পাশাপাশি ইদানীং গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে মৃতু্যর সংখ্যা বাড়ছে।

এর আগে নারায়ণগঞ্জ শহরের ফতুলস্নার পশ্চিমতলস্না এলাকায় বায়তুস সালাত জামে মসজিদের বিস্ফোরণের ঘটনায় ২৭ জনের মৃতু্য হয়েছে। পশ্চিমতলস্না বায়তুস সালাত জামে মসজিদে এশার নামাজের পর বিকট শব্দে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে মসজিদের ভেতরে থাকা অর্ধশতাধিক মুসলিস্ন দগ্ধ হন। এ সময় ওই এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়াও এসি বিস্ফোরণে অনেক মৃতু্যর ঘটনা ঘটেছে। আমাদের দেশের সমস্যা হলো- কোনো ঘটনা ঘটলে একাধিক তদন্ত কমিটি হয়। কিন্তু কানো কাজ হয় না। ফলে তদন্ত কমিটির প্রতি মানুষ আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। পাঁচ থেকে সাত বছর আগেও এসি বা গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে এত মৃতু্যর ঘটনা ঘটতো না। কিছুদিন আগে, চট্টগ্রামের পাথরঘাটা এলাকায় গ্যাসের পাইপলাইন বিস্ফোরণে দেয়াল ধসে ৭ জন নিহত এবং ১০ জন দগ্ধ হয়েছিল। এখানেই শেষ নয়, রাজধানীর রূপনগরে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে ৭ শিশুর মৃতু্য আমাদের হৃদয়ে দাগ কেটে আছে। বাসাবাড়িতে গ্যাস সংযোগে বা গ্যাসের চুলার ব্যবহারে অসাবধানতা ও অসচেতনতা, গ্যাসের সিলিন্ডার পরীক্ষা না করা এবং সরবরাহকৃত গ্যাসলাইনের ত্রম্নটির কারণে বিপদ এবং মর্মান্তিক পরিণতি ডেকে আনতে পারে তার দৃষ্টান্ত এসব দুর্ঘটনা। মানুষকে বলা হয় সৃষ্টির সেরাজীব, আশরাফুল মাখলুকাত। বর্তমান সমাজের মানুষ সবচেয়ে অনিরাপদ।

আশার কথা, নানা ধরনের দুর্ঘটনা ও বিপর্যয়ের মধ্যেও বাঙালির মনোবল কখনো দুর্বল হয়নি, হয়নি হীনবল। দৃঢ়চেতা ও মনোবলসম্পন্ন বাঙালি জাতি সব সময় এগিয়ে চলেছে সামনের দিকে। এমন কি করোনাকালেও তারা মনোবল হারাননি। বাঙালি জাতি বারবার প্রমাণ করেছে তারা অদম্য। তারা বিপদ মোকাবিলা করতে জানে। তবে এ ক্ষেত্রে সরকারকে হাত গুটিয়ে বসে থাকলে চলবে না। মেয়াদোত্তীর্ণ এসি, গ্যাস সিলিন্ডারসহ দুর্ঘটনাপ্রবণ সব বিষয়ে মনোযোগ বাড়াতে হবে। মনে রাখতে হবে, এসব দুর্ঘটনা রোধে ব্যক্তি সচেতনতা বাড়ানোসহ এ ব্যাপারে রাষ্ট্রেরও গভীরভাবে মনোযোগ দিতে হবে। মানুষ অকালে প্রাণ হারাক এটা কোনোভাবেই প্রত্যাশিত নয়। সরকারের পরিকল্পিত উদ্যোগই কেবল পারে মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে